বিতংস উপন্যাসের সূচনা দেয়ার অতীত রোমন্থনের প্রেক্ষাপটে। বহুবছর পর একদিন হারানো ডায়েরির সন্ধান দেয়াকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় শূন্য দশক থেকে সত্তর দশকের আলো-আঁধারির দিনগুলোতে। যে সময়টা জুড়ে ছড়িয়ে আছে তার শৈশব, কৈশোর, আনন্দময় তারুণ্যের স্মৃতি । একটি মফস্বল শহরের আটপৌরে পরিবারের দেয়ার জন্ম। তার শৈশব একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোর সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর স্বাধীন দেশে দেয়া সন্ধান পায় যেন এক পরশ পাথরের - যার স্পর্শে তার স্বপ্নগুলো হিরণ্ময় হয়ে উঠে। কৈশোরের সূচনালগ্নে সে হিরণ ভাইয়ের প্রেমে পড়ে যায়। একদিকে এই প্রেম তার ভেতরের মানুষটাকে জাগিয়ে তোলে, অন্যদিকে সে চিনতে শেখে চারপাশের কঠিন বাস্তবতাকে। কিন্তু কৈশোর, তারুণ্য জীবনের এমনই এক দুর্বিনীত সময় যখন কেউ তার চারপাশের শক্ত কাঁচের দেয়াল চুরমার করে দেওয়ার বিশ্বাস রাখে। দেয়া ক্রমশ তার শৈশব, কৈশোরের খোলস ছাড়িয়ে হয়ে উঠে প্রত্যয়ী এক তরুণী। শিখে ফেলে কিভাবে গ্রীবা উঁচিয়ে রাজহংসীর মতো পদক্ষেপ ফেলতে হয়। স্বপ্নভঙ্গের দুঃখকে এক তুড়িতে উড়িয়ে দিতে চায়। ঘটনার ধারাবাহিকতায় একে একে মঞ্চে প্রবেশ করে হোসনা আপা, দাদামনু, আম্মা, ভাইয়া, কাদের মোল্লা, কেয়া, আব্বা, শিপ্রা, মেলিতা আপা, খালেক মজুমদার। আরও একজন - শাহেনশাহ। নিজের জৈবিক সত্তার কাছে শাহেনশাহ উপস্থিতি যেন নিষিদ্ধ উপন্যাসের মতো। অদম্য কৌতুহল আছে কিন্তু পড়া যাবে না। জীবন তো শুধু হিসেবী মুহূর্তের আঁকিবুকি নয়। সেখানে না চাইতেও যোগ হয় অনেক বেহিসেবী পদক্ষেপ। নরম-কচি সবুজ পাতা চিত্রল হরিণীকে ক্ষণিকের জন্য ভুলিয়ে দেয় ভয়ংকর বিতংসের কথা। মাত্র সামান্য কয়েকটি মুহূর্ত! অথচ তার প্রভাব বয়ে বেড়াতে হয় আমৃত্যু।
দেয়া কখনও ভাবেনি এই সামাজিক বিতংস একদিন তাকেও বেঁধে ফেলবে। এই ফাঁদ বড়ই নিষ্ঠুর। একবার সেখানে অন্তরীণ হলে মানুষ ক্রমশ স্বপ্নহীন হয়ে যেতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত দেয়াও কি স্বপ্নহারাদের ভীড়ে মিলিয়ে যাবে? সে কি পারবে না চারপাশের সামাজিক বিতংস থেকে নিজেকে মুক্ত করতে? পারবে না তার হিরণ্ময় স্বপ্নকে ছুঁয়ে দিতে?
'বিতংস' উপন্যাসটি জীবনের সেই উপাখ্যানের সূত্র মেলাতে সমাজের সাথে সময়ের প্রতিচ্ছবির যোগবিয়োগ। বিতংস সিক্যুয়েলের পরবর্তী উপন্যাস ঘরট্ট এবং 'তিতিক্ষা'।